নভেল করোনা ভাইরাসের বিস্তার রোধে গত ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে কয়েক দফায় সরকারি বাড়ানো হয়েছে। সেই হিসেবে জুন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিন মাস ছুটিতে ব্যক্তি মালিকানাধীন এ সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ১০ লক্ষ শিক্ষক-শিক্ষিকা ও দেড় লক্ষ কর্মচারীর অর্থনৈতিক সংকটে মানবেতর জীবন যাপনের সম্মুখীন হতে যাচ্ছে।
এ দীর্ঘ ছুটিতে টিউশন ফিস নির্ভর এসব বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এক নিদারুন অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে ওদেশে এসব ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানে প্রায় এককোটি শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে ও প্লে-শ্রেণী থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত এসব প্রতিষ্ঠানের বন্ধের সময়ও সরকারের সাথে সংগতিতে অনলাইনের মাধ্যমে ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে।
এসব প্রতিষ্ঠান বেশিরভাগ ভাড়াবাড়িতে এবং শিক্ষার্থীদের মাসিক বেতনের উপর নির্ভরশীল। মাসিক আয়ের ৪০ শতাংশ বাড়িভাড়া, কর্মরত শিক্ষক-শিক্ষিকা কর্মচারীদের বেতনভাতা ৪০ ভাগ এবং ২০ ভাগ বিদ্যুৎ , পানি, গ্যাস, ইন্টারনেট অনুষ্ঠান ও অন্যান্য আনুষাঙ্গিক খাতে ব্যয় হয়ে থাকে ও সরকার কিংবা অন্য কোনো সংস্থার কোনো অর্থনৈতিক সুবিধা এসব প্রতিষ্ঠান পায়না। এসব প্রতিষ্ঠানের কমর্রতরা স্বল্প বেতন ও প্রাইভেট টিউশনির উপর নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহ করে। এতে বর্তমান সময়ে শিক্ষক কর্মচারীরা না পাচ্ছেন স্কুলের বেতন, না পাচ্ছেন টিউশনির বেতন। এ অর্থ সংকটে পড়েছে ১০-১২ লক্ষ শিক্ষক কর্মচারীর, অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে ৬,৫০০০ বেসরকারী স্কুল ও চট্টগ্রাম শহর ও পার্শ্ববর্তী উপজেলা সদরে অবস্থিত ১,৫০০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ৫০,০০০ শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছেন।
চট্টগ্রাম নগরীর পাঁচলাইশ রিডার্স স্কুল এন্ড কলেজের চেয়ারম্যান ও সংগঠক মঈনুদ্দীন কাদের লাভলু এখনবিডিকে বলেন, মানবতার নেত্রী সকল পেশায় প্রণোদনার ব্যবস্থা করলেও বেসরকারী শিক্ষা উদ্যোক্তাদের জন্য কোনো ঘোষণা আসেনি।
মুরাদপুর লাইমলাইট গ্রামার স্কুলের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো: খুরশিদ আলম এখনবিডিকে বলেন, এ স্কুলের টিউশন ফি হচ্ছে একমাত্র আয়ের উৎস। স্কুলের বাড়িভাড়া, শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন দেয়া হয়। কিন্তু মাসের পর মাস বন্ধ থাকার কারণে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতনও দিতে পারছিনা, ঘরভাড়াও দেয়া যাচ্ছে না।
কিন্ডারগার্টেন এডুকেশন এসোসিয়েশনের মহাসচিব অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম খান এখনবিডিকে বলেন, এই সংকটময় মুহূর্তে বিশেষ নজর দেয়ার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বরাবরে আবেদন করেছি।
পটিয়া নিশান কিন্ডারগার্টেনের প্রতিষ্ঠাতা অ্যাডভোকেট এস এম ইকবাল এখনবিডিকে বলেন, ৩-৪ মাস ছুটির মুখে পড়ে শিক্ষার্থীদের বেতন নেয়াও কঠিন হবে। বেতন নির্ভর ব্যয় বহন করা আদৌ সম্ভব হবে কিনা বুঝতে পারছিনা।
হাটহাজারী এনায়েতপুর কেজি স্কুলের অধ্যক্ষ সৈয়দ হাফেজ আহমেদ এখনবিডিকে বলেন, মান সম্মত শিক্ষা ব্যবস্থায় কিন্ডারগার্টেন গুলো বড় ভূমিকা রাখলেও মহামারী কোরোনার কারণে এ ক্ষতি পোষানো অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
অক্সিজেন নভেলটি স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ এডভোকেট হামিদ উল্লাহ বলেন, সরকারি সুবিধা বঞ্চিত হয়েও দেশের শিক্ষার হার বৃদ্ধিতে ও নতুন প্রজন্মকে মানসম্মত শিক্ষার বড় দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে।
ফটিকছড়ি গ্রীন পয়েন্ট সচলের অধ্যক্ষ ছৈয়দুল আজাদ বলেন, দেশের কোটি শিক্ষার্থীর দায়িত্ব নিয়ে সরকারের সহায়ক হলেও সরকারীভাবে বেসরকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য কোনো উৎসাহ ব্যঞ্জক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।
ইপিজেড কর্ণফুলী মডেল স্কুলের অধ্যক্ষ এনায়েত হোসেন বলেন, বিশাল এই জনগোষ্ঠীতে শিক্ষার জন্য এগিয়ে এসেছে ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলো। তাই এ দুঃসময়ে আমাদেরকে বাঁচানোর জন্য প্রধানমন্ত্রীর নিকট আবেদন জানাচ্ছি।
চান্দগাও রিডার্স ইংলিশ স্কুলের অধ্যক্ষ শারমিনা ইসলাম বলেন, মাসিক স্বল্প বেতনের উপর নির্ভরশীলতার কারনে আকস্মিক দীর্ঘ বন্ধের কবলে শিক্ষক-কর্মচারীরা মানবেতর দিন কাটাচ্ছে। সরকারের দৃষ্টি কামনা করছি। এতে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন প্রদানের জন্য বিনা সুদে সহজ শর্তে ঋণ সহায়তা প্রদান করার জন্য আবেদন জানান তিনি।
জানা গেছে, সারা দেশের শিক্ষা সংশ্লিষ্টদের একটাই দাবি, সরকার গামেন্টস, শিল্প, কৃষি, শ্রমজীবীসহ সকল পেশার ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্যাকেজে সহায়তা দিলেও বেসরকারি শিক্ষা খাতের জন্য কোন ধরণের নজরদারি নেই। এতে এসব প্রতিষ্ঠানের প্রতি নজর দেয়ার আহবান সরকারের প্রতি।##
বাংলাদেশ সময়: ১২:০৩ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ০৬ মে ২০২০
ekhonbd24.com | saidul islam
Development by: webnewsdesign.com