ব্রেকিং

x


পৃথিবীর কোথাও দুই পাহাড়ের মাঝখানে ফ্লাইওভার নেই: ব্যতিক্রম শুধু বাংলাদেশে

বৃহস্পতিবার, ১২ আগস্ট ২০২১ | ২:০৯ পূর্বাহ্ণ

পৃথিবীর কোথাও দুই পাহাড়ের মাঝখানে ফ্লাইওভার নেই: ব্যতিক্রম শুধু বাংলাদেশে

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে দুই পাহাড়ের মাঝখানে যে রাস্তা বা পাসগুলো রয়েছে সেগুলো অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে সংরক্ষণ করা হয়। পাহাড়গুলোর নান্দনিক সৌন্দর্য টিকিয়ে রাখতে কোন ধরনের অবকাঠামো ও ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হয় না। পরিবেশ, প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণকেই বেশী প্রাধান্য দেওয়া হয় এ ক্ষেত্রে। দুই দিকের সবুজ পাহাড় ও পাথরের পাহাড়গুলোর মাঝ দিয়ে আঁকাবাকা রাস্তাগুলো পর্যটনের জন্যও সাজানো হয় খুব সুন্দর ও পরিকল্পিতভাবে। কিন্তু একমাত্র বাংলাদেশেই চট্টগ্রামের টাইগার পাসের দুই পাহাড়ের মাঝ দিয়ে ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হচ্ছে।

এটাকে কাণ্ডজ্ঞানহীন, অপরিকল্পিত ও হঠকারী সিদ্ধান্ত বলছেন দেশের বিশিষ্ট নগর পরিকল্পনাবিদ, প্রকৌশলী ও স্থপতিরা। তাঁরা বলছেন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ(সিডিএ) কর্তৃক নির্মিতব্য এক্সপ্রেস ওয়ে নামের ফ্লাইওভারটি আগ্রাবাদ থেকে দেওয়ানহাট হয়ে টাইগারপাস মোড় পর্যন্ত নামানো যথেষ্ট ও অধিক যুক্তিযুক্ত। কিন্তু এটিকে টাইগারপাসের দুই পাহাড়ের মাঝখান দিয়ে লালখানবাজার মোড় পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার কোন মানে হয় না। ফ্লাইওভার হলে এতে দুই পাহাড়ের সবুজ গাছপালা ঢাকা পড়বে। পাশাপাশি নগরীর প্রাকৃতিক ও নান্দনিক সৌন্দর্য বিনষ্ট হবে। তাছাড়া এ এলাকার যে ভৌগোলিক ও ঐতিহাসিক নিদর্শনের যে অবয়ব ও পরিচিতি রয়েছে তা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে। এটা বর্তমান সরকারের পরিবেশ বান্ধব উন্নয়ন কার্যক্রমের ধারাবাহিকতাকে প্রশ্নের সম্মুখীন করবে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন থেকে এই ফ্লাইওভার নির্মাণে ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে আপত্তিপত্র দেওয়া হলেও সিডিএ তাদের কাজ চালিয়ে যেতে অনড়। সিডিএ এর বক্তব্য হলো, পরিকল্পিতভাবেই ফ্লাইওভারটি করা হচ্ছে এবং এতে পাহাড় ও গাছপালার ক্ষতি হবে না।

পৃথিবীর বিভিন্ন পাহাড়ী পাস: ইন্টারনেট ও বিভিন্ন অনলাইন তথ্যসূত্রে জানা যায়, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যে পাহাড়ী পাস বা রাস্তাগুলো রয়েছে সেগুলো খুব গুরুত্ব সহকারে সংরক্ষণ করা হয়। এগুলোকে বানিজ্যিক যোগাযোগ ও পরিবেশ পর্যটন শিল্পের জন্যও উন্নত করা হয়। কিন্তু কোন ধরনের এক্সপ্রেস ওয়ে, ফ্লাইওভার ও স্থাপনা অবকাঠামো নির্মাণ করা হয় না। সারা পৃথিবী জুড়ে প্রায় এক হাজারেরও অধিক পাহাড়ি পাস রয়েছে, যার মধ্যে অধিকাংশই প্রাকৃতিকভাবে গড়ে উঠেছে।
যেমন, আফ্রিকা মহাদেশে মিশরের বিখ্যাত হালফায়া পাস, মরক্কোর টিজি এন টিকা পাস, দক্ষিণ আফ্রিকার ইস্টার্ন কেপ পাস, ওয়েস্টার্ন কেপ পাস। এশিয়া মহাদেশে হিন্দুকুশ পর্বতমালার পাদদেশে আফগানিস্তানের কাবুলে সালাং পাস, কাজাকিস্তানের কাছে চীনের অলাটো পাস, ভারতের কাছে ডংকালা পাস, ভারতের কারাকোরাম পাস, মধ্যপ্রদেশের অসিরগর পাস, উত্তরখন্ডে কালিন্দী পাস, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের খাইবার পাস, তুরস্কের জিগানা পাস, জাপানের উসুই পাস।

পাহাড়ী রাস্তা বা পাসগুলোকে সবচেয়ে বেশী গুরুত্ব দেওয়া হয় আল্পস পর্বতমালার পাদদেশ ইউরোপে, বিশেষ করে সুইজারল্যান্ডে। পাহাড়ী পাসগুলো সুইজারল্যান্ডে করেছে অপরুপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত। এখানে রয়েছে শতাধিক পাহাড়ী পাস। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বার্নিনা পাস ও জুলিয়ার পাস। ফ্রান্সে রয়েছে কল ডি টেন্ডে পাস ও বিজরফিজেল পাস। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে উল্লেখযোগ্য হলো মধ্য ক্যালিফোর্নিয়ার পাচিকো পাস, ওয়াশিংটনের অস্টিন পাস ও গ্রিন পাস। দক্ষিণ আমেরিকার ইকুয়েডরের পাপালেক্টা পাস, আর্জেন্টিনা ও চিলির পাসো রোবালো। অস্ট্রেলিয়ায় রয়েছে পিচি রিচি পাস ও আর্থার পাস।

বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামে বেশ কয়েকটি পাহাড়ী পাস থাকলেও চট্টগ্রামে রয়েছে শুধুমাত্র একটি এই টাইগার পাস। কিন্তু সেটিকেও ঢেকে দেওয়া হচ্ছে নগর যোগাযোগ উন্নয়নের নামে ফ্লাইওভার দিয়ে। এ নিয়ে চট্টগ্রামের বিশিষ্টজনরা বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন।

লেখক: মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী; সাবেক মেয়র, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন।

Facebook Comments Box

বাংলাদেশ সময়: ২:০৯ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১২ আগস্ট ২০২১

ekhonbd24.com |

Development by: webnewsdesign.com