চট্টগ্রাম মহানগরীর ১৭টি রুটে দেড় হাজার বাস-মিনিবাস চলাচলের কথা থাকলেও আছে মাত্র সাড়ে ৪শ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনাকালে লকডাউনে যানবাহন বন্ধ থাকায় অনেক গাড়ি নষ্ট হয়ে গেছে। আবার যেগুলো সচল আছে সেগুলোর অধিকাংশই কল-কারখানায় শ্রমিক আনা-নেয়া করছে চুক্তি ভিত্তিতে।
এছাড়া নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বিআরটিএ ও সিএমপি ট্রাফিক পুলিশের তদারকির অভাবেও সড়কে গণপরিবহন কমে যাচ্ছে। গাড়ি সংকটে ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে অন্তত পাঁচটি রুট। এতে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পরিবহন মালিক গ্রুপের মহাসচিব বেলায়েত হোসেন বেলাল যুগান্তরকে বলেন, করোনায় গাড়ি বন্ধ থাকায় অনেক গাড়ি নষ্ট হয়ে গেছে। সেগুলো মেরামতের সামর্থ্য অনেক মালিকের নেই। এ কারণে এসব গাড়ি স্ক্র্যাপ হিসেবে বিক্রি করতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, এ সংগঠনের অধীনে এক সময় ৫০০টি গাড়ি ছিল। বর্তমানে আড়াইশর বেশি হবে না। এক সময় ট্রাফিক আইনে মামলার জরিমানা দিতে হতো ২শ টাকা। বর্তমানে মামলার সর্বনিম্ন জরিমানা আড়াই হাজার টাকা। পাশাপাশি সড়কে পারমিটবিহীন অসংখ্য ছোট গাড়ি চলাচল করছে। এ কারণেও গণপরিবহনে যাত্রী কমছে। সব মিলিয়ে পরিবহন খাত এখন লোকসানি ব্যবসা।
ট্রাফিক পুলিশ সূত্র জানায়, নগরীর ১৭টি গণপরিবহনের (বাস-মিনিবাস) রুটে ১ হাজার ৫৪৫টি গাড়ি চলাচলের সিলিং রয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ১৭৫টি গাড়ির রুট পারমিট দেওয়া হয়েছে। তবে বর্তমানে ৪৫০-৪৭০টির বেশি গাড়ি এসব রুটে চলছে না। জানা গেছে, কর্ণফুলী ব্রিজ থেকে চকবাজার হয়ে কোতোয়ালি মোড় পর্যন্ত এক নম্বর রুট। এ রুটে একশটি বাস-মিনিবাস চলাচলের সিলিং নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে ৪৩টি গাড়ির রুট পারমিটও দেওয়া হয়। অথচ কয়েক বছর ধরে এ রুটে একটি বাস-মিনিবাসও চলাচল করছে না। বন্ধ হয়ে গেছে রুটটি। ফলে এ রুটে ছোট গাড়ি মাহিন্দ্রা, হিউম্যান হলার, টুকটুকি (টেম্পো) গাড়িই যাত্রীদের একমাত্র যাতায়াতের মাধ্যম হয়ে উঠেছে। এভাবে গণপরিবহন সংকটে অন্তত ৫টি রুট বন্ধ হয়ে গেছে।
নগরীর যাত্রীরা বলছেন, বাস-মিনিবাস কম থাকায় নগরীতে অননুমোদিত ছোট গাড়ির দাপট বেড়েছে। যাতায়াতে চরম ভোগান্তির শিকার তারা। বিশেষ করে অফিসগামী যাত্রীদের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। তাদের ছোট গাড়িতে যাতায়াত করতে গিয়ে অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হচ্ছে।
নগরীর বাকি রুটগুলোর মধ্যে রয়েছে- কালুরঘাট ব্রিজ থেকে ষোলশহর, প্রবর্তক মোড় হয়ে বিআরটিসি পর্যন্ত ২ নম্বর রুট। এ রুটে ৭৫টি গাড়ির সিলিং থাকলেও ৪৫টি গাড়ির রুট পারমিট দেওয়া হয়। জিপিও থেকে পটিয়া হয়ে চন্দনাইশ বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটি পর্যন্ত ১৩ নম্বর রুট। এ রুটে ৩০টি গাড়ির সিলিং। এখন পর্যন্ত একটি গাড়িরও রুট পারমিট দেওয়া হয়নি। ফলে শুরুই করা যায়নি রুটটি। কয়েক বছর আগে নগরীতে ঘটা করে উদ্বোধন করা হয় প্রিমিয়ার ট্রান্সপোর্ট নামে এসি বাস সার্ভিস।
কাপ্তাই রাস্তার মাথা থেকে সি-বিচ পর্যন্ত এসি বাস সার্ভিসের ১৪ নম্বর এ রুটটিতে ২০টি গাড়ির সিলিং নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে ৪টি গাড়ির পারমিট দেওয়া হয়। এখন সেগুলোও আর চলে না। কুয়াইশ কানেকটিং রোডের মুখ থেকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত ১৬ নম্বর রুট। এ রুটের জন্য ৩০টি গাড়ির সিলিং নির্ধারণ করা হয়। অথচ এখনো চালু করা যায়নি রুটটি। তবে দাপটের সঙ্গে চলছে ৩ নম্বর রুটের গাড়িগুলো। এ রুটে একশটি সিলিং থাকলেও আরও অন্তত একশ থেকে দেড়শ বাড়তি গাড়ির প্রয়োজন আছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এছাড়া সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারী থেকে টাইগারপাস পর্যন্ত ৪ নম্বর রুটে ১৫০টি গাড়ির সিলিং, এর মধ্যে রুট পারমিট ১৩২টির, চলাচল করে মাত্র ৬০-৬৫টি। বিমানবন্দর থেকে লালদীঘি পর্যন্ত ৫ নম্বর রুট। এ রুটে ৭৫টি গাড়ির সিলিং, সবগুলোরই রুট পারমিট দেওয়া হয়। তবে চলাচল করে মাত্র ৩০-৩৫টি। সি-বিচ থেকে লালদীঘির পাড় পর্যন্ত ৬ নম্বর রুট। এ রুটে ১৫০টি গাড়ির সিলিং, রুট পারমিট ১৫০টির। চলাচল করে মাত্র ৮০ থেকে ৯০টি। ভাটিয়ারী থেকে বড়পুল, বাদামতলী হয়ে আটমার্সিং পর্যন্ত ৭ নম্বর রুট। এ রুটে ১২৫টি গাড়ির সিলিং, পারমিট ১০৭টির, বর্তমানে চলাচল করছে ৫৫-৬০টি।
অক্সিজেন থেকে টাইগারপাস-লালদীঘি পর্যন্ত ৮ নম্বর রুট। এ রুটে ৭৫টি গাড়ির সিলিং, রুট পারমিট ৩৯টির, চলছে ১৫-১৬টি। কালুরঘাট থেকে সি-বিচ পর্যন্ত ১০ নম্বর রুট। এ রুটে ২০৫টি গাড়ির সিলিং, রুট পারমিট ১৯৭টির, চলছে ১১০-১১৫টি। ভাটিয়ারী থেকে পোর্টকানেকটিং রুট হয়ে সি-বিচ পর্যন্ত ১১ নম্বর রুট।
এ রুটে ১২৫টি গাড়ির সিলিং, রুট পারমিট ১২৫টির, চলছে ৮০-৮৫টি। কাপ্তাই রাস্তার মাথা থেকে বহদ্দারহাট হয়ে সি-বিচ পর্যন্ত ১৫ নম্বর রুট। এ রুটে ৫৫টি গাড়ির সিলিং, সমপরিমাণ গাড়ির রুট পারমিট রয়েছে। সব গাড়িই চলছে। নিমতলা, বড়পুল হয়ে সীতাকুণ্ডের বড় দারোগার হাট পর্যন্ত ১৭ নম্বর রুট। এ রুটে ৩০টি গাড়ির সিলিং, রুট পারমিট ২০টির। তবে এ সড়কে রুট পরিবর্তন করে অলংকার মোড় থেকে চলাচল করে। অপরদিকে ইপিজেডে কর্মরত শ্রমিকদের জন্য রিজার্ভ স্টাফ বাস চলাচলের জন্য ২০০টি সিলিং নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে রুট পারমিট দেওয়া হয় ৯৩টির।
জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের যুগ্ম সম্পাদক নজরুল ইসলাম বাপ্পি যুগান্তরকে বলেন, পরিবহন লাইনে এখন আর আগের সুদিন নেই। এক সময় এ সমিতির অধীনে দক্ষিণ চট্টগ্রামের ১১টি রুটে ২৫০টি গাড়ি ছিল। বর্তমানে আছে মাত্র ১৩০টি।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) শ্যামল কুমার নাথ যুগান্তরকে বলেন, নগরীর সড়কে যানবাহন কমার বিষয়টি আমিও শুনেছি। কী কারণে কমছে তা খতিয়ে দেখা হবে। সম্প্রতি সোনার বাংলা নামে কাউন্টারভিত্তিক নতুন গাড়ির লাইন চালু করা হয়েছে। এভাবে নগরীর সব গণপরিবহন কাউন্টারভিত্তিক করা হলে সড়কে বিশৃঙ্খলা যেমন কমবে, তেমনি ছোট গাড়ির দাপটও কমবে।
বাংলাদেশ সময়: ৩:৪৫ অপরাহ্ণ | শনিবার, ১৩ মার্চ ২০২১
ekhonbd24.com | the reporter
Development by: webnewsdesign.com