দেশের এ মুহুর্তেই বিভিন্ন স্থানে লকডাউন, সতর্কতাজারি, নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা, বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া বের হওয়া নিষেধ এবং সরকারি ছুটির মধ্যেও নিত্যপণ্য সামগ্রীর সরবরাহ নিশ্চিত করতে মালবাহী ট্রেনের চলাচল স্বাভাবিক রাখা হয়েছে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলে। গত ২৫ মার্চ সন্ধ্যা থেকে সারাদেশে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচলও বন্ধ হয়ে যায়।
করোনার এ সংক্রমণ ঠেকাতে ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটিও চলছে। খাদ্যপণ্য, আমদানি-রফতানি কনটেইনার ও জ্বালানী পরিবহনের স্বার্থে খোলা রয়েছে রেলওয়ের অপারেশনাল সব ধরনের কার্যক্রম। এতে যানবাহন সুবিধা না থাকায় ঝুঁকি নিয়ে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে কর্মস্থলে গিয়ে কাজ করছেন রেলওয়ের বিভিন্ন বিভাগের কর্মীরা। ঝুঁকি ছাড়াও আর্থিক ভাবে সংকটে পড়েছে নি¤œশ্রেণীর পদে কর্মরত এসব কর্মচারীরা।
রেলওয়ের সূত্রে জানা গেছে, ট্রেনের সংখ্যা ৯৫ শতাংশ কমলেও ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে দেশের প্রায় সবগুলো স্টেশনই খোলা রাখতে হচ্ছে। রেলওয়ে একটি প্রকৌশলগত পরিবহন মাধ্যম এবং দেশের অধিকাংশ রেলপথ ও স্টেশন ডিজিটাল না হওয়ায় পরিবহন বিভাগের বিভিন্ন কর্মীদের কর্মস্থলে শতভাগ উপস্থিত থাকতে হচ্ছে।
কিন্তু স্টেশন বা কর্মস্থল এলাকা থেকে দূরে থাকার কারণে প্রতিদিনই পায়ে হেঁটে কাজে যেতে হচ্ছে। চালক, গার্ড-সহ বিভিন্ন শ্রেণীর কর্মীদের জন্য স্টেশন এলাকায় কোয়ার্টার থাকলেও বাবুর্চি না থাকা, খাবার হোটেল বন্ধ থাকার কারণে ট্রেন অপারেশনের কাজে ক্ষোভ বাড়ছে।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় মাঠ পর্যায়ে কাজ কম। পরিবহন বিভাগের কর্মীদের পণ্যবাহী ট্রেন চলাচলের স্বার্থে কর্মক্ষেত্রে উপস্থিত থাকতে হচ্ছে। নিয়ম অনুযায়ী স্টেশন এলাকায়
দায়িত্বরত কর্মীরা ওই এলাকায় আবাসিক হিসাবে থাকবে। এতে কেউ থাকতে না চায়, তাহলে স্টেশনেই থাকার ব্যবস্থা আছে। তবে দেশের এমন পরিস্থিতিতে মাঠের কর্মীদের এই ত্যাগ অবশ্যই স্বীকার করতেই হবে।
রেলওয়ে কেন্দ্রীয় শ্রমিকলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, সরকারের সবগুলো গুরুত্বপূর্ণ দফতরের কর্মীরা আপদকালীন সময়ে বিশেষ সুবিধায় কাজ করছে। পিডিবি, ওয়াসা-সহ বিভিন্ন সেক্টরের কর্মীরা প্রতিষ্ঠানের যানবাহনে কর্মস্থলে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। কিন্তু রেলকর্মীরা দেশের খাদ্য, জ্বালানী ও আমদানি-রফতানি পণ্যের সরবরাহে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখলেও তাদের জন্য কোন যানবাহন সুবিধা নেই। রেলের উচিত আপদকালীন সময়ে কর্মক্ষেত্রে যাওয়া কর্মীদের ন্যুনতম মানবিক সুবিধাগুলো নিশ্চিত করা।
জানা গেছে, করোনা ভাইরাসের ঝুঁকিতেই আছেন পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের ‘অপারেশনাল’ কাছের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা-কর্মচারিরা! সরকারি বন্ধের সময়েও প্রতিদিন চলাচল করছে তেলবাহি ট্যাংক, কন্টেইনার ও খাদ্যবাহি ট্রেন। এসব ট্রেন চলাচলেসহ পূর্বাঞ্চলে আরএনবি, মাস্টার, ওয়েম্যান, পয়েন্সম্যানসহ বিভিন্নভাবে বর্তমানে কর্মরত আছেন প্রায় ১ হাজার স্টাফ। এসব স্টাফদের অধিকাংশদের মাঝে এখনও দেয়া হয়নি নিরাপত্তার উপকরণগুলো।
নামেমাত্র কিছু মাস্ক, গøাভস ও স্যানিটাইজার দেয়া হলেও কতদিন থাকে এসব উপকরণ। রাস্তায় চলাচলে রয়েছে সংষ্পর্শের আংশকাও। রয়েছেন করোনা ভাইরাসের নানাবিধ ঝুঁিক, যাতায়াত সমস্যা এবং খাবার সংকটেও। ট্রেন চলাচলের নিরাপত্তায় ২৪ ঘন্টা খোলা রাখা রয়েছে চট্টগ্রামের পাহাড়তলী ও সিআরবিস্থ ট্রেন কন্ট্রোলরুমও।
এতে ঝুঁকি এড়াতে নিরাপত্তাবলয়ের জন্য পারসোনাল প্রটেকশন ইক্যুইপমেন্ট (পিপিই), স্যানিটাইজার, মাস্ক, গøাভস, প্রয়োজনীয় খাবার এবং যাতায়াতসহ ব্যবস্থা নিশ্চিত করেনি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। ফলে নিয়মিত শংকার মধ্যেই দায়িত্বপালন করছেন দায়িত্বশীল এসব কর্মকর্তা-কর্মচারিরা।
রেলের পরিবহন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী (আরএনবি), স্টেশন মাস্টার, ওয়েম্যান, পয়েন্সম্যানসহ বিভিন্নভাবে বর্তমানে কর্মরত আছেন প্রায় কয়েক হাজার স্টাফ। করোনাভাইরাসের প্রকোপ বাড়ার পর এসব কর্মীদের মাঝে সীমিত আকারে নিরাপত্তা সরঞ্জাম প্রদান করা হলেও যা ছিল খুবই অপ্রতুল। যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকা থেকে স্টেশনে আসতে হচ্ছে হেঁটে হেঁটে।
অনেকে প্রান্তিক স্টেশনগুলোতে ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার পায়ে হেঁটেও অফিস করতে যাচ্ছে। যা নি¤œ পদের এসব কর্মীদের জন্য কষ্টকর। সম্প্রতি দূর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতিতে পরিবহন বিভাগের কর্মীদের রেলের পক্ষ থেকে যানবাহন সুবিধার দাবি তুলেছেন। এ মুহুর্তেই দায়িত্বশীল রেলের কর্মীদের জন্য বিশেষ কোন সুবিধা না পেলে আরো কঠিন পরিস্থিতির শিকার হবেন বলে জানান এ শ্রমিক নেতা।
রেলওয়ে ও স্থানীয় নিভর্রযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, ট্রেন চলাচল বন্ধের মধ্যেও ঝুঁকিতে দায়িত্ব পালন করছেন রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী (আরএনবি), ইয়ার্ড মাষ্টার, লোকোমাস্টার, খালাসি, ট্রাফিক ইন্সপেকট, মেইনলাইনের বিভিন্ন ষ্টেশন ম্যানেজার, স্টেশন মাষ্টার, গার্ড, ওয়েম্যান, পয়েন্সম্যান, টিএনএল, টিএক্সআর, ডিএসটিই, সান্টিং জমাদার, সান্টিং পোটার, লোকো মাষ্টারসহ অনেকেই।
এতো ঝুঁিকর মধ্যেই অপারেশনার কাজেই নিয়মিত মাঠে বা ষ্টেশনে চাকরি করছেন অনেকেই। গাড়ি না থাকায় যাতায়াতে সমস্যা, খাবারসহ নানাবিধ সমস্যা সংকট। এসব কর্মীরা নির্ধারিত স্টেশনে কাজ করলেও খাবার সুবিধা না থাকায় অসুস্থ হয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটছে।
সম্প্রতি রেলওয়ে কর্মীদের বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে করোনা পরিস্থিতিতে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করা অপারেশনাল কর্মীদের জন্য রেলের পক্ষ থেকে যানবাহন সুবিধা প্রদান, খাদ্য সরবরাহ, নিরাপত্তা সরঞ্জাম প্রদানের পাশাপাশি ঝুঁকি ভাতা প্রদানের দাবি তোলা হয়। নেতৃবৃন্দের দাবি, অপারেশনাল কাজে দেশের স্বার্থে মাঠ পর্যায়ের রেলকর্মীরা কাজ করলেও তাদের সুরক্ষার বিষয়ে কর্তৃপক্ষের নজর নেই।
রেলের অনেক যানবাহন স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ থাকার কারণে অলস পড়ে আছে। প্রকল্পের কাজ বন্ধ থাকায় অনেক যানবাহন চলাচল বন্ধ। অথচ অপারেশনাল কাজের প্রয়োজনে এই পরিস্থিতিতেও রেলকর্মীরা দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে কর্মস্থলে পৌঁছাচ্ছে। কিন্তু অপারেশনাল কাজের গুরুত্বপূর্ণ এসব কর্মীরা নি¤œ বেতনে চাকরি করলেও তাদের জন্য কোন সুযোগ সুবিধা দেয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন তারা।
বাংলাদেশ সময়: ৯:০৩ অপরাহ্ণ | শনিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২০
ekhonbd24.com | faroque
Development by: webnewsdesign.com