হালদা নদীর দৈর্ঘ্য ১০৬ কিলোমিটার। কিন্তু সেপ্টেম্বর ২০১৮ থেকে ফেব্রুয়ারি ২০২১ পর্যন্ত হালদা নদীতে শুধুমাত্র হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসন অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করেছে ২৬৮ কিলোমিটার দীর্ঘ লম্বা কারেন্ট জাল। যা পুরো হালদা নদীর দৈর্ঘের আড়াই গুণেরও বেশি।
একই সময়ে উপজেলা প্রশাসন পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালতের ১৫৮টি অভিযানে ধ্বংস করা হয় বালু উত্তোলনে ব্যবহৃত ৫০টি ইঞ্জিনচালিত নৌকা, জব্দ করা হয় ১ লাখ ১৫ হাজার ঘনফুট বালু। এসব অভিযানে ধ্বংস করা হয় বালু উত্তোলনে ব্যবহৃত সাড়ে তিন কিলোমিটার দীর্ঘ পাইপ এবং জাল বসানোর কাজে ব্যবহৃত নৌকা জব্দ করা হয় পাঁচটি। একইসঙ্গে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ১ লাখ ৬৬ হাজার টাকা জরিমানা করা হয় এবং তিনজনকে দেয়া হয় এক মাসের কারাদণ্ড।
এছাড়াও হালদা দূষণের দায়ে পরিবেশ অধিদফতর ও হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসনের যৌথ অভিযানে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে ১০০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্ট ও এশিয়ান পেপার মিল। আবার নিলামে বালু বিক্রি থেকে উপজেলা প্রশাসনের আয় হয়েছে ২ লাখ ২৫ হাজার টাকা। এর বাইরে রাউজান উপজেলা প্রশাসন ও নৌ পুলিশের উদ্যোগেও পরিচালিত হয়েছে একাধিক অভিযান।
কিন্তু এতকিছুর পরও থামানো যাচ্ছে না এই নদীকে ঘিরে থাকা কিছু বালুখেকো ও অসাধু মাছ ব্যবসায়ীকে। নিয়মিত কারেন্ট জাল কিংবা বালু উত্তোলনে ড্রেজার বসিয়ে তারা ধ্বংস করছেন হালদার জীববৈচিত্র্য।
খাগড়াছড়ির জেলার বাটনাতলী পাহাড় হতে নেমে সর্পিল ১০৬ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে হালদা নদী মিলেছে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীতে। দেশের একমাত্র জোয়ার-ভাটার রুই জাতীয় মাছের প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র এই নদীর সুরক্ষায় সরকার মুজিববর্ষ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু হেরিটেজ ঘোষণা করেছে।
সম্প্রতি চট্টগ্রামের সদরঘাট নৌ থানার উদ্যোগে বসানো হয়েছে আটটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ক্লোস সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা। এসব ক্যামেরা দিয়ে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থান থেকে স্মার্টফোন এবং একাধিক ডিভাইস দ্বারা মনিটরিং করা হচ্ছে এবং কোনো অসংগতি দেখলেই ছুটে যাওয়া হচ্ছে। এছাড়া ওই এলাকায় স্থাপন করা হয়েছে একটি নৌ পুলিশ ফাঁড়ি। যেখানে কাজ করছেন আট পুলিশ সদস্য। গত বৃহস্পতিবারও(১১ মার্চ) এসব সিসি ক্যামেরায় দেখে অভিযানে গিয়ে বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে ৭ হাজার মিটার অবৈধ জাল জব্দ করা হয়েছে।
সদরঘাট নৌ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এবিএম মিজানুর রহমান বলেন, ‘আটটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ক্যামেরার মাধ্যমে হালদা নদীর মদুনাঘাট থেকে আমতোয়া পর্যন্ত মনিটরিং করা হচ্ছে। আগামী এপ্রিল মাস থেকে হালদা নদীতে প্রাকৃতিক প্রজনন শুরু হবে। মা-মাছের যাতে ক্ষতি না হয়, স্বাভাবিকভাবে ডিম ছাড়তে পারে সেটি নিশ্চিত করার জন্য কাজ করছি।’
হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিন বলেন, ‘দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে জাতীয় একটি সম্পদকে রক্ষা করতে কাজ করেছি। কখনো রাতে, কখনো ভোরে কিংবা কখনো সন্ধ্যায় ছুটে গেছি। অভিযান পরিচালনা করেছি বালুখেকো এবং অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে। পাশাপাশি চেষ্টা করে যাচ্ছি হালদা পাড়ের বাসিন্দাদের সচেতন করতে। বর্তমানেও হালদা নদী রক্ষায় উপজেলা প্রশাসন সর্বদা তৎপর রয়েছে।’
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির কো-অর্ডিনেটর ড. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু হেরিটেজ ঘোষিত হালদা নদী আমাদের জাতীয় সম্পদ। এই নদীর জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সম্প্রতি প্রযুক্তির ব্যবহার হচ্ছে। এটা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। আমি দাবি জানাচ্ছি, শুধু একাংশে নয়, পুরো হালদা নদীকে সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় নিয়ে আসা হোক। পাশাপাশি এই জাতীয় সম্পদ হালদা নদীকে রক্ষা করা আমাদের সবার দায়িত্ব। তাই এই নদীর পাড়ের বাসিন্দাসহ সবাইকে এগিয়ে আসতে হতে হবে।’
বাংলাদেশ সময়: ৪:১৭ অপরাহ্ণ | সোমবার, ১৫ মার্চ ২০২১
ekhonbd24.com | the reporter
Development by: webnewsdesign.com